#প্রিয়চিত্রসাথী নিউজ💐
একসময় ভাবা হতো যে ক্যানসার মানেই ‘নো অ্যানসার’। মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসত আতঙ্ক। রোগী তো বটেই, রোগীর পরিবারকেও গ্রাস করত উদ্বেগ, আশঙ্কা, টেনশন। এখন কিন্তু সেই ধারণা পুরোপুরি পাল্টেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তাতে আটকে দেওয়া সম্ভব ক্যানসারকেও।
ভারতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মুখের ক্যানসার, লাংস ক্যানসার, স্টমাক ক্যানসার, গল ব্লাডার ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার, কোলন ক্যানসার আর ব্রেস্ট ক্যানসার। দশজন ক্যানসার রোগীর মধ্যে সাতজনই উপরের ক্যানসারগুলির কোনও একটিতে আক্রান্ত। এই ক্যানসারগুলির নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নেশা। মুখের ক্যানসার মূলত হয় ধূমপান, খইনি, গুটখা বা অন্য যে কোনও শুকনো নেশার প্রভাবে। ধূমপানের জন্য হয় লাংস ক্যানসার। অ্যালকোহলে আসক্তির পরিণতি স্টমাক ক্যানসার। তাই নেশা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। নেশা থাকলে প্রাণপণে চেষ্টা করুন তা কমাতে। না হলে প্রাণটাই সংশয়ে পড়বে!
সকালে আমরা অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া-দাওয়া করি না। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে কিন্তু স্টমাক ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তেল-মশলাযুক্ত খাদ্য, ফাস্ট ফুড, মদ্যপান ইত্যাদির কারণেও এই ক্যানসার হয়। আবার পান, বিড়ি, গুটখার রস পেটে গিয়ে স্টমাক ক্যানসার, গল ব্লাডার ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে। কোলন ক্যানসার হয় রেড মিট খেলে। মাটন, বিফ তাই যত প্রিয়ই হোক, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মদ্যপানও কোলন ক্যানসারের জন্য দায়ী। ওভারিয়ান ক্যানসারের উপসর্গ হল অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড। এমন কিছু টের পেলে অবশ্যই টেস্ট করাবেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ে পঞ্চাশ পেরনোর পর পি.এস.এ টেস্ট বাধ্যতামূলক। বংশগত কারণও বড় ভূমিকা নেয় ক্যানসারে। অনেক সময় অজানা কারণেও হয় ক্যানসার।
এই রোগকে দূরে রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা। প্রতি বছর স্ক্রিনিং টেস্ট করা দরকার। তাহলে প্রথম স্টেজেই ক্যানসারকে ধরা সম্ভব। বি.পি. পোদ্দার হাসপাতালের গ্রুপ অ্যাডভাইজার সুপ্রিয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘ক্যানসার মানেই কিন্তু আতঙ্ক নয়, ভয়ও নয়। একে দমন করতে গেলে সবার আগে চাই সচেতনতা। ৩৫-৪০ বছরের পর থেকে তাই নিয়মিত চেক-আপ আবশ্যক। মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, ই.এস.আর, সি.আর.পি, চেস্ট এক্সরে, হোল অ্যাবডোমেন ইউ.এস.জি, লাইপেজ-অ্যামাইলেজ টেস্ট। সার্ভিকাল ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। অন্যথায় প্রতি বছর প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করান। এর সঙ্গে ইউরিন টেস্ট (আর.ই) ও স্টুল টেস্ট (ও.বি.টি) করে রাখুন। প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট বাদ দিয়ে পুরুষরা এই টেস্টগুলোর প্রতিটাই করান। তাঁদের প্রয়োজন প্রস্টেটের জন্য পি.এস.এ। এই সমস্ত টেস্টেরই অত্যাধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে বি.পি. পোদ্দার হাসপাতালে। আগামী এক মাস ক্যানসারের স্ক্রিনিং টেস্টগুলিতে একত্রে বিশেষ ছাড়ও মিলবে এখানে। ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে কনসালটেশন ও ফিজিক্যাল এক্সামিনেশনের ব্যবস্থাও থাকছে বিনামূল্যে।’
ক্যানসার প্রতিরোধে দরকার সঠিক লাইফস্টাইল। সুপ্রিয় চক্রবর্তীর মতে, ‘পান, খইনি, জর্দা, গুটখা তো বটেই, দূরে রাখুন ফাস্ট ফুড, অত্যধিক তেল-জাতীয় খাদ্যও। বয়স বাড়লে অবশ্যই বর্জন করুন মিষ্টিকে। ক্যানসারের কোষ সুগার খেয়েই বেঁচে থাকে। তাই মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন যতটা সম্ভব।’ অর্থাৎ, খাওয়া-দাওয়া ও নেশা নিয়ে সতর্কতা প্রচণ্ডভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতা কিন্তু আপনার নিজের হাতেই রয়েছে।
0 Comments