6/recent/ticker-posts

নারীর শক্তি শুরু হোক সুস্থতার পথে: সচেতনতা থেকে কর্মে, নারীর জীবন বাঁচাতে উদ্যোগী বেঙ্গল অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (বিওজিএস)

 #প্রিয়চিত্রসাথী নিউজ💐
কলকাতা, ১১ আগস্ট ২০২৫:
নারীর স্বাস্থ্য শুধু পরিবারের নয়, সমগ্র সমাজের কল্যাণের মূলভিত্তি। তবুও কোটি কোটি নারী আজও মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিরোধমূলক পরীক্ষার সুযোগ এবং প্রজননস্বাস্থ্যের পরিষেবার নাগালের বাইরে রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সময়মতো রোগ শনাক্তকরণ, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং জনসচেতনতা— এই তিনটি উপায়েই নারীদের বহু প্রতিরোধযোগ্য রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
 
ভারতে স্তন ক্যান্সার নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়— দেশের মোট ক্যান্সারের ২৮.২% এর জন্য দায়ী এই রোগ। ২০২২ সালে প্রায় ৯৮,৩৩৭ জন নারীর মৃত্যু ঘটেছে স্তন ক্যান্সারের কারণে। এর জন্য এখনো কোনো টিকা নেই, তাই আগেভাগে শনাক্ত করাই একমাত্র প্রতিরোধের পথ।
 
প্রতিষ্ঠার ৮৯ বছর পূর্ণ করা বেঙ্গল অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (বিওজিএস) কলকাতায় আয়োজিত বার্ষিক স্বাস্থ্যসচেতনতা অনুষ্ঠানে নারীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রায় ১,২০০ জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সদস্যপদ নিয়ে বগস বরাবরই নারীদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে, বিশেষত আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা নারীদের জন্য।
 
২০২৫–২০২৬ সালের মূল থিম — "নারীর জীবন বাঁচাতে: সচেতনতা থেকে কর্মে" — যা সচেতনতাকে বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তরের ওপর জোর দেয়, যাতে নারীর স্বাস্থ্য ও জীবনমান দুটোই উন্নত হয়।
 
মূল উদ্যোগ ও কার্যক্রম
 
নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে জ্ঞান ও সেবার সুযোগ পৌঁছে দিতে বগস একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেমন—
 
 স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি: কলকাতার প্রান্তিক এলাকায় প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যজ্ঞান ও প্রাথমিক শনাক্তকরণের ওপর জোর দিয়ে বিশেষ প্রচারাভিযান।
 বিনামূল্যে পরামর্শ ও স্ক্রিনিং টেস্ট:
 
   রক্তপরীক্ষা (রক্তাল্পতা ও থ্যালাসেমিয়ার জন্য)
   স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক শনাক্তে ম্যামোগ্রাফি
   মেনোপজ-পরবর্তী অস্টিওপোরোসিস নির্ণয়ে বোন মিনারেল ডেনসিটোমেট্রি (BMD)
   জরায়ু মুখ ক্যান্সার শনাক্তে প্যাপ স্মিয়ার ও VIA টেস্ট
 
এই পরিষেবাগুলি সারা বছরজুড়ে চলবে, যাতে বিশেষভাবে সুবিধা পান আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া নারী ও কিশোরীরা।
 
বেঙ্গল অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (বিওজিএস)-এর সভাপতি ডা. এম. এম. সামসুজ্জোহা উদ্বোধনী ভাষণে বলেন—
"শুধু সচেতনতা যথেষ্ট নয়, আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে— তা হোক প্রাথমিক রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা কিংবা শিক্ষার মাধ্যমে। এই বছরের থিম আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতিফলন, যা প্রত্যেক নারীর জীবনের মান উন্নত করার পথে সহায়ক হবে, বিশেষত যারা সহজে স্বাস্থ্যসেবা পান না।"
 
বেঙ্গল অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (বিওজিএস)-এর মাননীয়া সম্পাদক ডা. তুলিকা ঝা বলেন—
"নারীর স্বাস্থ্য বরাবরই বিওজিএস-এর মিশনের কেন্দ্রে। প্রায় নয় দশক ধরে আমরা যেভাবে সমাজে প্রভাব ফেলেছি, তা নিয়ে আমরা গর্বিত। এ বছরও আমরা নিশ্চিত করব যাতে প্রান্তিক নারীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পান। একসাথে আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য আরও স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারি।"
 
 
FOGSI (Federation of Obstetric and Gynecological Societies of India)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বিওজিএস শুধুমাত্র কলকাতায় নয়, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে নারীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। একাডেমিক অনুষ্ঠান, জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য-অধিকার রক্ষার আন্দোলনের মাধ্যমে তারা নারীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।
 
প্রায় নয় দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় বিওজিএস নারীদের নিজস্ব স্বাস্থ্যসচেতনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। সচেতনতা থেকে কর্মে রূপান্তরিত এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আগামী দিনের জন্য এক সুস্থ ও শক্তিশালী নারীকেন্দ্রিক সমাজ গড়ে তুলবে।

Post a Comment

0 Comments