#প্রিয়চিত্রসাথী নিউজ💐
কলকাতা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪: এক নিমেষে আমাদের পৃথিবী পালটে যেতে পারে, যখন হঠাৎ করেই জীবন শেষ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়ায়। যখন আমাদের জীবনের ওপর সেই চরম সংকটের মুহূর্ত এসে উপস্থিত হয়, আমরা জীবন এবং মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াই তখন আমাদের জীবন রক্ষার্থ্যে কেবল ওষুধ নয়, সংকটের মুহুর্তে বীরের মতো তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ রেখে চিকিৎসকরা আমাদের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এমনই দু'টি সাহসিকতার ঘটনার সাক্ষী থেকেছে মণিপাল হাসপাতাল। মণিপাল হাসপাতালের ডাক্তাররা জীবন বাঁচাতে উদাহরণ সৃষ্টিকারী দ্রুত এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
প্রথম ঘটনাএই বছর 6 ডিসেম্বরের। বিমানে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে ৪৫ বছর বয়সী এক মহিলার জীবনে হঠাৎই সঙ্কট নেমে আসে। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসে ভীষণ অনিয়ম দেখা দেয়। তাঁর রক্তচাপ প্রাণঘাতী মাত্রায় বেড়ে যায়। সেই সময় তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন মণিপাল হাসপাতাল (কলকাতা)-এর জরুরি বিভাগের পরামর্শদাতা ও ইনচার্জ ডা. স্মিতা মৈত্র। সৌভাগ্যক্রমে তিনি সেই সময় সেই বিমানেই যাত্রা করছিলেন। খুব ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে অসুস্থ মহিলার চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন তিনি। বিমানে সীমিত চিকিৎসা সামগ্রী উপলব্ধ থাকা সত্ত্বেও ডা. মৈত্র দ্রুত কাজ করেছিলেন। তিনি অসুস্থ মহিলাকে ফ্লুইড ওভারলোড কমাতে ল্যাসিক্স, বুকে ব্যথার কমাতে নাইট্রোগ্লিসারিন এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক করার জন্য অক্সিজেন দেওয়া শুরু করেন। ডা. মৈত্রর সময়মত এই হস্তক্ষেপ মহিলার জীবন রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যা একটি মারাত্মক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়া থেকে মহিলাকে বাঁচিয়েছিল। এরপর বিমানটি রাঁচিতে জরুরি অবতরণের আগে ডা. মৈত্র তাঁর চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে এরপর রোগীকে নিরাপদে এমন স্থানে স্থানান্তর করা সম্ভব যেখানে তাঁর আগামী চিকিৎসা হতে পারে ।
ঠিক একইভাবে, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪-এ, বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডা. গরিমা অগরওয়াল, পরামর্শদাতা ও নেফ্রোলজিস্ট তথা মণিপাল হাসপাতাল ভার্থুর রোডের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসক এমন চরম সংকটময় পরস্থিতিতে উপস্থিত ছিলেন যেখানে এক ব্যক্তির প্রাণ বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ন হন তিনি। দিল্লিতে তাঁর ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করার সময় তিনি এক ব্যক্তিকে হঠাৎ হৃদয় রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়তে দেখেন। সেই সময় সেখানে অন্য কোনও চিকিৎসক উপলব্ধ না থাকায় ডা. অগরওয়াল কোনও কিছু না ভেবেই দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সিপিআর দেওয়া শুরু করেন। সাহায্যের জন্য অন্যদের ডাকেন। সেই সময় আক্রান্তের শ্বাসনালী পরিষ্কার করার চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ডা. অগরওয়াল বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে তিনি সিপিআর চালিয়ে যেতে থাকেন। তারপর সেখানে বিমানবন্দরের একটি মেডিক্যাল টিম এসে পৌঁছায় এবং তারা একটি এইডি (AED) ব্যবহার করে এবং চিকিৎসা শুরু করে। ডা. অগরওয়ালের এই দ্রুত পদক্ষেপের সৌভাগ্যবশত ব্যক্তির স্বাভাবিক নাড়ির গতি ফিরে আসে এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সময়মতো স্থিতিশীল হয়।
ডা. মৈত্র এবং ডা. অগরওয়ালের দ্রুত চিন্তাভাবনা এবং দক্ষতা উদাহরণ সৃষ্টি করে যে কীভাবে কার্ডিয়াক জরুরি পরিস্থিতিতে সময়মত হস্তক্ষেপে জীবন বাঁচতে পারে। ভারতে, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেক হাসপাতালে পৌঁছাতে ৪০০ মিনিট সময় লাগে, যা লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে আদর্শ ৩০ মিনিটের সময়সীমার চেয়ে অনেক বেশি। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ১৮ মিনিটের মধ্যে হস্তক্ষেপ না করলে, অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হতে পারে। এই কারণেই মণিপাল হাসপাতাল একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে অন্তত ৩ শতাংশ ভারতীয় সিপিআর (CPR) দিতে শেখেন।
মণিপাল হাসপাতাল সারা বছর ধরে স্কুল, কলেজ, কর্পোরেট অফিস এবং প্রতিষ্ঠানগুলিতে বহু সিপিআর প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালনা করেছে। শুধুমাত্র কলকাতাতেই তারা ২,০০০-র বেশি স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের “হৃদয়ে জুড়ে কলকাতা” উদ্যোগের মাধ্যমে, তারা সিকিউরিটি গার্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবক, অ্যাসোসিয়েশন এবং সম্প্রদায়ের সদস্যদের সিপিআর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যাতে প্রয়োজনে সহায়তা সবসময় কাছাকাছি থাকে।nবেঙ্গালুরুতে তাদের সাম্প্রতিক "মিশন 3K - 3000 হার্টস ওয়ান বিট" উদ্যোগটি 3,319 জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে সব থেকে বৃহৎ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
0 Comments